ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ ও ৮টি ক্ষতিকারক দিক
ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ ও ৮টি ক্ষতিকারক দিক । ব্রয়লার মুরগি হলো জেনেটিক্যালি ডেভলপকৃত উন্নত জাতের মুরগি।৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার জন্য উপযোগী হয়ে যায় এই ব্রয়লার মুরগি। ব্রয়লার মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য মুরগি তুলনায় খুবই কম।
আমাদের খাবারের তালিকায় মুরগি থাকবেই। কারণ অন্য মুরগি বা গরু ,খাসি যাই বলেন না কেন সব মাংসের তুলনায় ব্রয়লারের দাম অনেক কম। দামে সাশ্রয়ী যার কারণে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও আমরা নিয়মিত ব্রয়লার মুরগি খাচ্ছি। তবে ব্রয়লার মুরগির কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে। আজকে আমরা জানবো ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ ও ৮টি ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে।
পেজ সূচিপত্র ঃব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ ও ৮টি ক্ষতিকারক দিক
- ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ
- ব্রয়লার মুরগির ক্ষতিকারক দিক
- উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা থাকে ব্রয়লার
- কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়ায় ব্রয়লার মুরগি
- ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় ব্রয়লার মুরগি
- হার্টের সমস্যাই ব্রয়লার মুরগি
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়
- পেটের সমস্যা হয় ব্রয়লার মুরগিতে
- অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে ব্রয়লার মুরগিতে
- পুরুষত্ব হ্রাস পায় পোল্ট্রি মুরগি খেলে
- ব্রয়লার চাষের সুবিধা সমূহ
- উপসংহার ঃ ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ ও ৮টি ক্ষতিকারক দিক
ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ
ব্রয়লার মুরগি নাম শুনলে আমরা মনে করি ব্রয়লার মানেই বিষ। নিত্যদিনের খাবারের সঙ্গী হলো এই মুরগি। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির চিকেন ফ্রাই খুব মজাদার একটি খাবার আমাদের কাছে। তবে হ্যাঁ একথা স্বীকার করতে হবে অতিরিক্ত ব্রয়লার মুরগি আমাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
এছাড়াও বয়লার মুরগিতে অনেক রকমের ভিটামিন রয়েছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। ব্রয়লার মুরগির মাংস নরম হাওয়ায় ছোট বাচ্চারা খুব মজা করে খায়। বাড়ির বয়স্ক ব্যাক্তিরাও এই মাংস খুব তৃপ্তি করে খাই।আজকে আমরা জানবো এই মুরগির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে;
১. একজন স্বাভাবিক মানুষের শরীর ভালো রাখতে প্রতিদিন ঘরে ২০০০ ক্যালরি প্রয়োজন। আর ১০০ গ্রাম বয়লার মুরগীতে রয়েছে ১১৪ গ্রাম ক্যালোরি।
২. প্রোটিনে ভরপুর হলো পোল্ট্রি মুরগি। পোল্ট্রি বা বয়লার মুরগিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। যা আমাদের শরীরে প্রোটিনের অভাব দূর করে। একজন গড় প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৫০ গ্রাম প্রোটিন দরকার হয়। আর ১০০ গ্রাম বয়লারের ৮০.০৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যা মানুষের শরীরের চাহিদায় ৫৬ %।
৩. আমাদের শরীরে ফ্যাট প্রয়োজন ৬৫% । ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগিতে ফ্যাট রয়েছে ৩ . ৫৮ গ্রাম। যা মানুষের শরীরের চাহিদার ৫%।
৪. আমাদের শরীরের কর্ম ক্ষমতার জন্য ভিটামিন খুব জরুরী । আর নিয়মিত পোল্টি মুরগির মাংস আমাদের ভিটামিন এর অভাব পূরণ করবে। কেন না পল্টি মুরগিতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ৯, ভিটামিন বি ৩। এছাড়াও ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ৩ এবং খনিজ উপাদান ।
৫. ব্রয়লার মুরগিতে থাকা খনিজ পদার্থ (ক্যালসিয়াম) দেহের বিকাশ ও সুস্থ থাকার জন্য অতীব জরুরী।
৬. ব্রয়লার মুরগির মাংসে রয়েছে নিয়াসিন যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৭. ব্রয়লার মুরগির মাংস খেলে শরীরে এনার্জি মেটাবলিজম সহজ হয়।
ব্রয়লার মুরগির ক্ষতিকারক দিক
প্রতিটি জিনিসের ক্ষেত্রেই যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমন খারাপ দিকও রয়েছে। আর বয়লার মুরগি তার ব্যতিক্রম কিছু নয় । তবে গবেষকদের, গবেষণা অনুযায়ী বয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ এর চেয়ে নিয়মিত বয়লার মুরগী খেলে তার ক্ষতিকারক দিকগুলোই বেশি ।
আরো পড়ুনঃ কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন
এজন্য বিভিন্ন গবেষণায় বার বার সচেতন করে আমাদের নিয়মিত পোল্টি মুরগির
মাংস খাওয়া থেকে। আজ আমরা বয়লার মুরগির ক্ষতিকারক ৮টি দিক নিয়ে আলোচনা করব।
চলুন জেনে নেওয়া যাক বয়লার মুরগির ক্ষতিকারক দিকসমুহ।
উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা থাকে ব্রয়লারে
প্রতিদিন নিয়মিত বয়লার মুরগির মাংস খেলে আপনারও হতে পারে উচ্চ রক্তচাপের
সমস্যা। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আগে থেকে আছে তারা যদি নিয়মিত বয়লার
মুরগির মাংস খাই, তবে তাদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে খুব
তাড়াতাড়ি।
আপনারা যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা অবশ্যই এই মুরগির মাংস এড়িয়ে চলবেন।
যাদের বয়স একটু বেশি তারা হয়তো এই মাংসটা খেতে পছন্দ করে। কিন্তু যদি কোন
সমস্যা বা রক্তচাপের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে পোল্ট্রি মুরগির মাংস না
খাওয়াই ভালো।
কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়ায় ব্রয়লার মুরগি
ব্রয়লার মুরগি কৃত্রিম উপায়ে বড় হওয়ার ফলে এতে প্রচুর চর্বি তৈরি হয় যা আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কোলেস্টেরলের মূল উৎস হlলো লাল মাংস অর্থাৎ গরু ,ছাগল , ভেড়া ইত্যাদির মাংস। যেহেতু সকল প্রাণিজ খাবার কোলেস্টেরল বাড়ায়, তাই মুরগির মাংসেও কোলেস্টরের মাত্রা বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ব্রয়লার মুরগির মাংস রান্না করা চাইতে তেলে ভেজে বা ফ্রাই করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তাই যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে তাদেরব্রয়লারের মাংস কম খাওয়া উচিত।
ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় ব্রয়লার মুরগি
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কলিজা, হাড় ও মাংসে রয়েছে মানবদেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১০ গুণ বেশি আর্সেনিক দ্বিগুণ মাত্রায় ক্রোমিয়াম, পারদ ও সীসা সহ অন্য ভারী ধাতুর উপস্থিতি। ব্রয়লার মুরগি দীর্ঘদিন খেলে ক্যান্সারের মতো রোগ হতে পারে বলে ধারণা করেছে গবেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্রাতিরিক্ত ব্রয়লার মুরগি খেলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় , তার সাথে সাথে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। তাই সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই ব্রয়লার মুরগি এড়িয়ে চলুন।
হার্টের সমস্যাই ব্রয়লার মুরগি
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রয়লার মুরগী হাটের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ
অতিরিক্ত ব্রয়লার মুরগির মাংস খেলে শরীরে বিভিন্ন রকমের ব্যাকটেরিয়া বাসা
বাঁধতে থাকে। সেই সাথে শরীরের রক্ত চলাচলের বাধা সৃষ্টি হয়, যার কারণে হার্ট
এটাকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও বয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন রকম অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ানো হয়। যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। হার্ট এটাকের পাশাপাশি আরও বড় বড় রোগের কারণ হতে পারে ব্রয়লার মুরগি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়
নিয়মিত ব্রয়লার মুরগির মাংস খেলে কমবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলেছে, পল্টি মুরগি খেলে একাধিক এন্টিবায়োটিক আর শরীরে কাজ করবে না। কেননা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে। ব্রয়লার মুরগির গোস্ত এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ আমাদের শরীরের জন্য।
এছাড়াও ছোটখাটো রোগে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না। যার ফলে রোগ সারাতে সাহায্য নিতে হবে ডাক্তারের উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য। যে অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের শরীরে কুপ্রভাব ফেলবে। তাই অবশ্যই ব্রয়লার মুরগির মাংস নিয়মিত খাওয়ার আগে একবার ভেবে নিন।
পেটের সমস্যা হয় ব্রয়লার মুরগিতে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্রয়লার মুরগির শরীরের পক্ষে একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। কেননা যেভাবে ব্রয়লার মুরগীদের বড় করা হয় তা একেবারে সঠিক পদ্ধতি নয়। সর্বোপরি, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনুসরণ না করে তারা তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন রকম অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ও ব্রিড করে থাকে যা সরাসরি আমাদের শরীরের উপর প্রভাব পড়ে। আর এসব মুরগির গোস্ত খেয়ে আমাদের পেটের সমস্যা নিত্যদিনের। ছোট থেকে বড় সবাই ফু্ডপয়জোনিং এ ভোগে।
আরো পড়ুন ঃচুলের যত্নে মেথির ব্যবহার ও ৭ টি উপকারিতা
এছাড়াও ব্রয়লার মুরগিতে ই -কোলাই ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া এর অন্যতম প্রধান কারণ ফুড পয়জনিং । ব্রয়লার মুরগি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার খেয়ে মানুষ বেশি ফুড পয়জনিং এ আক্রান্ত হয়।
অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে ব্রয়লার মুরগিতে
ব্রয়লার মুরগিতে প্রচুর পরিমাণে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে। আর এই উপাদান গুলি স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও উপকারী নয়। ব্রয়লার মুরগির মাংস নিয়মিত খেতে থাকলে আপনার শরীরে অনেক বড় বড় রোগের দেখা মিলবে। এই রোগ গুলি আগামী দিনে আপনার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তাই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান এবং সুস্থ থাকুন। যেসব খাবার আমাদের শরীরের জন্য
ক্ষতিকর, সেই সব খাবার আমাদের এড়িয়ে চলাই ভালো। ব্রয়লার মুরগিতে ফাইবার খুবই কম থাকে, তবে ক্যালরি থাকে প্রচুর পরিমাণে।
পুরুষত্ব হ্রাস পায় পোল্ট্রি মুরগি খেলে
হ্যা এ কথা সত্যি যে পুরুষত্বর ঝুঁকির মুখে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবেও দায়ী করে পোল্ট্রি মুরগিকে।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ নিয়মিত ব্রয়লারের মাংস খায় তাদের জন্মদান ক্ষমতা স্বাভাবিক পুরুষের চেয়ে অনেক কমে যায়।
এছাড়াও ব্রয়লার মুরগিতে এন্টিবায়োটিক এর প্রভাব থাকার ফলে মানুষের শরীরের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব অনেক অংশে কমে যায়। যার ফলে মানুষের শরীরে অনেক রোগ দেখা দেয়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকি পূর্ণ ।
ব্রয়লার চাষের সুবিধা সমূহ
১. অল্প পুঁজিতে খামার করা যায়।
২. কম জায়গাতে খামার করা যায় ।
৩. অল্প সময়ে বেশি লাভবান হওয়া যায় ।
৪. খুব দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে না ।
৫. সারা বছর ব্রয়লার পালন করা যায় ।
৬. বয়লার খুব দ্রুত বর্ধনশীল ফলে অধিক মাংস উৎপাদন করা যায় ।
৭.বয়লার চাষে দারিদ্রতা বিমোচন করে ।
৮. অন্য খামারের তুলনায় ঝুঁকি কম ।
৯ .মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মহিলারাও চাইলে এই খামারের দেখাশোনা করতে পারে।
১০. কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
উপসংহার ঃ ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ ও ৮টি ক্ষতিকারক দিক
ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ যেমন রয়েছে তেমন রয়েছে ক্ষতিকারক দিক। যারা
স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশি সচেতন আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম, বা বিভিন্ন
অসুখে যারা ভুগছেন তাদের জন্য বলব আপনারা বয়লার মুরগি এড়িয়ে চলুন।
ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণের চাইতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি আমার কাছে মনে হয়।
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি যদি সম্পূর্ণভাবে পড়ে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই বুঝতে পারছেন ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ আর ক্ষতিকর দিক গুলো কি। ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে দেড় থেকে ২ কেজি ওজন হয় এই মুরগির। এত অল্প সময়ে এত ওজন হলে সেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
আমার আর্টিকেলটি পরে ভালো লাগলে অবশ্যই পাশে থাকবেন। আর নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করবেন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url