আমরা প্রায় প্রতিদিন আলু খেয়ে থাকি।এই আলুর পুষ্টিগুণ অনেক।আলুতে রয়েছে ভিটামিন 'এ', 'বি' ও ভিটামিন 'সি'।এ ছাড়াও আলুর খোসাতে রয়েছে ভিটামিন 'এ' পটাশিয়াম, আয়রন, অয়ান্টি-অক্সাইড প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইট্রেড ।
চলুন এবার জেনে নেয়া যাক আলু খাওয়ার উপকারিতা। আলুকে নিয়ে অনেকের মনে নানা ধরনের সন্দেহ রয়েছে।কেউ কেউ মনে করেন আলু খেলে ওজন নাকি আরো বেড়ে যায়। এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা আলু আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
এ ছাড়াও আলু আমাদের নিত্য দিনের খাবারের তালিকায় তো আছেই । বাঙ্গালীর খাদ্য তালিকায় আলু ছাড়া অসম্পূর্ণ । রান্না ঘরে ঢুকবেন আর আলুর দেখা পাবেন নাহ তা কখনো হয়না । আলু এমন একটি সবজি যা প্রতিটি তরকারীর সাথেই যায় । প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা যদি দেখতে যান তাহলে ভাত রুটির পাশাপাশি আলু আছেই ।
আলুর বিশেষ গুন
আলুতে থাকা ফাইবার শরীরের হজম ক্ষমতা বাড়ায় । দাঁত ও মাড়ি ভালো রাখে । বিশেষ করে সেদ্ধ আলু আমাদের খুব উপকার করে । আলুতে রয়েছে ফাইবার , আয়রন , ক্যালসিয়াম , পটাশিয়াম , ফসফরাস,ভিটামিন 'সি' সহ নানাবিদ গুনাগুন ।
আমরা অনেকেই মনে করি আলু খেলে মোটা হয়ে যাবো ,এ কথা সম্পূর্ণ ভুল বরং আলুতে থাকে ফাইবার , এটি অনেকক্ষণ আপনার পেট ভরিয়ে রাখে । ফলে ক্ষুধা কম লাগে । তাই মোটা হবার ভয় থাকেনা ।
আলু সেদ্ধ খাওয়ার উপকারিতা
সেদ্ধ আলু নিয়মিত খেলে শুধু ভিটামিন বি৬ পাওয়া যায়না ভিটামিন সি ও প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় । সেদ্ধ আলু মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে শুধু তাই নয় মাংসপেশি তৈরিতে বেশ সহায়ক । সেদ্ধ আলু খেলে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে । সেদ্ধ আলুর খোসাতেও রয়েছে ভিটামিন সি ।
ছোটো বাচ্চাদের আপনি আলু সেদ্ধ খাওয়াতে পারেন , দীর্ঘ সময় বাচ্চার পেট ভরে থাকবে এবং বাচ্চার স্বাস্থ্য ভালো হবে । ছোটো বাচ্চাদের জন্য সেদ্ধ আলু খুব উপকারি ।
আলু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আলুতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । আলুতে পটাশিয়াম বেশি রয়েছে ও ফসফরাস কম রয়েছে যার কারনে আলু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ।
আলু পেটের সমস্যা দূর করে যেমন ডায়রিয়া হলে বেশি বেশি আলু খেলে আপনার পেটের ভিতরের মন্দ ব্যাকটেরিয়া বের করতে সাহায্য করে । আলু খেলে পেটের বদহজম দূর হই । আলুতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম,আয়রন ও জিঙ্ক আপনার হাড় ভালো রাখে ।
আলু উচ্চ রক্তচাপ কমায়
আলু উচ্চ রক্তচাপ কমায় । যারা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশানে ভুগছেন তাদের জন্য আলু খুব উপকারি । আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমান পটাশিয়াম যা আপনার রক্তচাপ কিংবা হাইপারটেনশান কমাতে সাহায্য করে । আলু শুধু আমাদের দেশে না সারা বিশ্বে আলু ব্যাপক জনপ্রিয় ।
রক্তচাপের অন্যতম কারন হচ্ছে সোডিয়াম , যা আলুতে খুব সামান্য রয়েছে ফলে উচ্চ রক্তচাপ হবার সম্ভাবনা থাকে নাহ । তবে তেলে ভেজে যেমন আলুর ফ্রাই,চিপস , অতিরিক্ত মসলা যুক্ত আলুতে কোনো পুষ্টিগুণ থাকেনা । বরং ক্ষতির সম্ভবনা থাকে ।
ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে
আমরা অনেকেই মনে করি আলু খেলে মোটা হয়ে যাবো ,এ কথা সম্পূর্ণ ভুল বরং আলুতে থাকে ফাইবার , এটি অনেকক্ষণ আপনার পেট ভরিয়ে রাখে । ফলে ক্ষুধা কম লাগে । তাই মোটা হবার ভয় থাকেনা ।যে কারনে ওজন বাড়ার ভয় থাকেনা।
মস্তিস্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে আলু খেলে।কিন্তু আলু অতিমাত্রাই খেলে ওজন বাড়ার সম্ভবনা থাকে।তাই স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পরিমান মতো আলু খেতে হবে। আলুতে যে পরিমান ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে তাতে ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
আলু খেলে পেটে পাথর হয়না
পেটের পাথর হয়না আলু খেলে । কি অবাক হচ্ছেন , আসলেই অবাক হবার মতই কথা । আলু খেলে পেটে কেন পাথর হয়না আসুন জেনেনি , হজম ক্ষমতা ঠিক থাকলে আমাদের শরীরে পানির পরিমান ঠিক থাকে । পানির পরিমান ঠিক থাকলে পেটে পাথর সৃষ্টি হয়না । মূলত এ জন্য বলা হয়ে থাকে আলু খেলে পেটে পাথর হয়না ।
খুব বেশি প্রোটিন যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হবার আশংকা থাকে। কারন হাই-প্রোটিন যুক্ত খাবার শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। ক্যালসিয়াম জমে পাথর ডেকাতে আলুর ম্যাগনেসিয়াম দারুন কাজ করে।
ত্বকের সোন্দয্য বৃদ্ধি করে
আলু আমাদের ত্বকের সোন্দয্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । আপনি নিয়মিত আলুর রস করে তার সাথে বেসন মিসিয়ে পেস্ট করে শরীরের যে কোন যায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন । আপনার শরীরের কালো দাগ , পুড়া দাগ দূর করতে আলু খুব গুরুত্বপূর্ণ । সাতদিন ব্যবহার করলে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।
আলু আমাদের রুপ চর্চায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।আলুর রস মাথায় ও ব্যবহার করা যায়।আলু আমাদের নানী দাদিদের যুগ থেকে আলুর রূপচর্চা ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানের বিউটিসিয়ানরাও রূপচর্চার ঘরোয়া উপাদান হিসাবে আলু ব্যবহার করে।
হৃদ রোগের ঝুকি কমায়
আলুতে আছে ফাইবার , পটাশিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ ,ভিটামিন সি ,যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে যার ফলে হৃদ রোগের আশংকা কমে যায় । কোলেস্টেরল ঠিক থাকলে হার্ট ও সুস্থ থাকে । তাই বলা যেতে পারে আলু আমাদের হৃদ রোগের ঝুকি কমায় । অনায়েসে বলতে পারি আলু অনেক উপকারি একটি সবজি ।
বিভিন্ন ভিটামিনের ঘারতি পুরন করে
আলু খাওয়ার উপকারিতা হলো আলু আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের ভিটামিনের ঘারতি পুরন করে।যেমন ভিটামিন বি৬,ভিটামিন বি৯,ভিটামিন সি,ভিটামিন এ।এক সবজিতেই আমরা এতো ধরনের ভিটামিন পেয়ে থাকি।যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।তাছাড়া আলু অ্যান্টঅক্সিডেন্ট গুন সমৃদ্ধ।
আলু ফাইবার জাতীয় খাবার, তাই আলু নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।আলু খেলে আমাদের বাড়তি ভিটামিনের প্রয়োজন হবেনা।আলুতে অনেক রকম ভিটামিন বিদ্যমান রয়েছে।তাই নিশ্চিন্তে আলু খেতে পারেন।
বাঙ্গালীর খাদ্য তালিকায় যে আলু ছাড়া অসম্পূর্ণ এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আলু খাওয়ার নানান উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন অনেক অপকারিতাও রয়েছে। অতিরিক্ত আলু খেলে আপনার স্বাস্থ্য ও সোন্দয্যের উপর নানান কু-প্রভাত ও পড়তে পারে।
বেশি পরিমান আলু খাওয়ার ফলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।আলু স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু হলেও ১০০ গ্রাম আলুতে ক্যালরি দাড়ায় ১১৩ ক্যালরি। শরীরে বেশি পরিমান ক্যালরি গ্রহন করলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। তারপরেও রান্নার উপর নির্ভর করে আপনি কি আদো আলুর পুষ্টিগুণ গ্রহন করছেন কি না শুধুই ক্যালরি। বেশি পরিমান ক্যালরি গ্রহন করলে মোটা হবার সম্ভবনা থাকে।
বেশি আলু খেলে ক্রিয়েটিনের পরিমান বেঁড়ে যায়
ইদানিং সময় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বয়সে বিশেষ করে যারা ৪০ পার করেছেন কিংবা হাইপ্রেসার বা ডায়াবেটিকস ছিল এ ধরনের মানুষের বেশি ক্রিয়েটিনের পরিমান বেড়ে যায়, যার কারনে কিডনিতে বাজে প্রভাব পড়তে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিকস হাইপ্রেসার এর মাত্রা বেশি তাদের আলু কম খেতে হবে। বেশি আলু খেলে ক্রিয়েটিনের পরিমান বেঁড়ে যায়, তাই খাবারের তালিকায় আলু না রাখায় ভালো।
আলু কখনই ফ্রাই করে খাবেন নাহ। ফ্রাই করা আলুতে প্রচুর পরিমান ক্যালরি থাকে যা আলুর পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয়। আলু বেশি খেলে রক্তে ক্রিয়েটিনের পরিমান বেড়ে যায়। আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেটস। কার্বোহাইড্রেটস শুধু ওজন বাড়াই না তার সাথে ডায়াবেটিকস এর ঝুকি বাড়াই।
ডায়াবেটিকস এর ঝুকি বাড়াই
বেশি পরিমান আলু খেলে শরীরে ইনসুলিনের পরিমান বেড়ে যায় , যার কারনে ডায়াবেটিকস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যাদের রক্তে ইনসুলিনের পরিমান বেশি তাদের আলু খাওয়া কমাতে হবে। সাধারনত আমরা জানি ডায়াবেটিকস রোগিদের মাটির নীচের সবজি খাওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত মাত্রাই ডায়াবেটিকস না হোলে আলু খাওয়া যাবে।
আলুতে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে
আলুতে প্রচুর পরিমান কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এবং এটি বেশি পরিমান খাওয়াতে ক্যালরি বেড়ে যায় । বেশি ক্যালরি আপনার স্বাস্থ্য বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা অবশ্যই বেশি আলু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
নিয়মিত আলু খাদ্য তালিকায় থাকলে কার্বোহাইড্রেট বেড়ে যায় এবং পুষ্টির পরিবর্তে ক্যালরি বৃদ্ধি পায়।যার কারনে শরীরে ক্ষতি সাধন হতে পারে। তাই অবশ্যই আমাদের কম ক্যালরি যুক্ত খাবার ্কম খেতে হবে। বেশি ক্যালরি আমাদের শরীরের ক্ষতি করে মেদ বাড়াতে সাহায্য করে।
আলুতে অতিরিক্ত পটাশিয়াম আছে
আলুতে প্রচুর পরিমান পটাশিয়াম আছে। অতিরিক্ত পটাশিয়াম গ্রহন করলে হাইপারক্যালেমিয়া নামক অবস্থা হতে পারে।আর হাইপারক্যালেমিয়া হোলে আপনার শরীর অসুস্থ হতে পারে যেমন ;বমি হতে পারে,বুকে ব্যাথা হতে পারে, মাথা ঘুরানো ইত্যাদি রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।তাই যে কোনো খাবার পরিমান মতো খাওয়া টাই ঠিক। কারন আমাদের সুস্থ থাকতে হবে।
শেষ কথা ঃ আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে আলুর মধ্যে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান যেমন পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম ,মিনারেল ,ভিটামিন, ফাইবার,ম্যাগানিজ ও কার্বোহাইড্রেটস শরীরের জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয় । আলু আমাদের সোন্দয্য বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে ।
অনেক গুন আলুর মধ্যে তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাই আলু থাকবেই থাকবে।শুধু আমাদের দেশে না সারা বিশ্ব জুড়ে আলু জনপ্রিয় একটি সব্জি।আলু শুধু সবজি না আলু দিয়ে অনেক পদের খাবার বানানো যায়। তাই নিত্য দিনের প্রয়োজনে আলুর গুরুত্ব অপরিসীম।
আলু খেলে যেমন আমাদের অনেক উপকার রয়েছে তেমন অনেক অপকার ও রয়েছে,তাই আমাদের সঠিক নিয়েমে আলু খেতে হবে।আলুর উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে আর কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিবেন।ধন্যবাদ সবাইকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url