পায়ের গোড়ালি ফাটার কারন ও প্রতিকার

  সাধারনত আমরা শীত কালে বেশি পা ফাটার সমস্যাই ভুগি। শীতে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আবার এমনও মানুষ আছে যাদের বছরের বেশি সময়েই পা ফাটা থাকে। পা ফাটা একটা রোগ ও বলা যায়।

এ সমস্যা যে কোনো বয়সের মানুষের হয়ে থাকে। তবে পুরুষের চাইতে নারীদের পা ফাটার সমস্যা বেশি দেখা দেয়।কেননা পুরুষের থেকে নারীর ত্বক বেশি নরম।পায়ের গোড়ালি ফাটলে প্রচুর ব্যাথাও হয়, এবং মাঝে মধ্যে তো রক্ত ক্ষরণও  দেখা দেয়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পায়ের গোড়ালি ফাটার কারন ও প্রতিকার

পায়ের  গোড়ালি ফাটার অন্যতম প্রধান কারন

পা ফাটার অনেক কারন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কারন হোলও পামোপ্লান্টার কেরাটোডামা ,এটি একটি জীন বাহিত চর্ম রোগ যেটার কারনে পা শুষ্ক হয়ে যায় এবং একসময়  ফেটে যায় , যার ফলে চলাফিরাই ব্যাঘাত ঘটে ।

এ ছাড়াও প্সরিয়াসিস (psoriasis)নামক  খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি চর্ম রোগ রয়েছে , এই রোগে সাধারনত হাত পায়ের  চামড়া  অতিমাত্রায় উঠতে থাকে এবং মাঝে মধ্যে চুলকানি হয় এবং মাঝে মাঝে ব্যাথাও হতে পারে।এ ছাড়া পিট্যারিয়াসিস (pityriasis) নামক আরেকটি চর্ম রোগ রয়েছে । 

এই রোগে প্সরিয়াসিস এর মতো শীতকালে তীব্রতা অত্যান্ত বেড়ে যায় এবং হাত পায়ের চামড়া ফেটে যায় । এ ছাড়াও নরম শু না পরা এবং পানি কম খাওয়া , ভিটামিন 'এ','সি' ও 'ই' পরিমান মতো না খাওয়া।লম্বা সময় ধরে দাড়িয়ে কাজ করা এসব কারনের জন্য অনেক সময় পা ফেটে যেতে পারে ।

পায়ের গোড়ালি ফাটার ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি

পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যা কম বেশি আমাদের সকলের। বর্তমান যুগে এই পা ফাটা থেকে পরিত্রাণ পাবার অনেক মাধ্যম ও রয়েছে। শীত কাল মানের ত্বকের বিশেষ যত্ন নিবার সময়।কম বেশি আমরা সকলেই এই সমস্যায় ভুগি।

পায়ের গোড়ালি ফাটার পতিকার হিসেবে আমরা কিছু  ঘরোয়া স্টেপ ফলো করবো।বাড়তি টাকা খরচ না করে আমরা কিভাবে পায়ের যত্ন নিবো সেগুলা স্টেপ বায় স্টেপ জেনে নিই। স্টেপ গুলো অনুসরণ করলে অবশ্যই আপনারা উপকৃত হবেন।চলুন জেনে নেয়া যাক।

স্টেপ নাম্বার ১:নারিকেল তেল । নারিকেল তেলের মধ্যে রয়েছে এন্টিইনফ্লামেটিরি উপাদান।  আপনা্দের যেটা করতে হবে  সেটা হলো,  পা ডুবিয়ে রাখা যাবে এমন একটি পাত্র নিয়ে এক চামচ পরিমান নারিকেল  তেল নিয়ে  পানিতে মিশিয়ে পা ডুবিয়ে রাখতে হবে।

এটাতে আপনি ভালো প্রতিকার পাবেন। দিনে দুইবার  করতে পারেন  ৮ থেকে ১০ দিন । পা ভিজা থেকে উঠানোর পর শুকনো ন্যাকড়া দিয়ে ভালো ভাবে পা  মুছে পরিস্কার করে নিবেন।নিয়মিত যত্ন নিলে অবশ্যই আমরা পায়ের গোড়ালি ফাটার প্রতিকার থেকে রক্ষা পাবো।

স্টেপ নাম্বার ২:লেবুর রস। পা ডুবানো যায় এমন একটি পাত্র নিয়ে একটি গোটা লেবুর রস ও একটি মিনি শাম্পুর প্যাকেট পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে,এরপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট দুইটি পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এই পদ্ধতি দিনে একবার করবেন ,৮ থেকে ১০ দিন। আপনাদের পায়ের কন্ডিশান দেখে দুই চার দিন বেশিও করতে পারেন।

আপনারা হয়তো সকলেই জানেন লেবু আমাদের শরীরে ভিটামিন 'সি' এর ঘারতি পুরন করে।তার পাশাপাশি ত্বকের ক্ষেত্রে ও অনেক উপকারী।

স্টেপ নাম্বার ৩:গোলাপ জ্বল ও গ্লিসারিন।এ দুইটায় বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। একটি ছোটো পাত্রে এটি মিশ করবেন।কিভাবে মিশ করবেন আসুন জেনে নিই ,গোলাপ জল দিবেন তিনচতুর্থাংশ আর গ্লিসারিন দিবেন একচতুর্থাংশ ।এবার এটি ভালোভাবে মিশিয়ে পায়ে লাগাবেন। দিনে একবার তবে ঘুমানোর আগে করার চেষ্টা করবেন।

গ্লিসারিন আমাদের ত্বকের জন্য খুব উপকারি।তার সঠিক ব্যবহার জানলে অবশ্যই আপনি উপকার পাবেন।তাই আমরা সঠিক নিয়মটি ব্যবহার করার চেষ্টা করবো।

স্টেপ নাম্বার ৪: পেট্রোলিয়াম বা অলিভওয়েল। দিনে দুইবার সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমাতে যাবার আগে, সামান্য পরিমান পেট্রোলিয়াম জেলি হাতে নিয়ে পায়ের গোড়ালিতে লাগিয়ে নিন। পেট্রোলিয়াম অথবা অলিভওয়েল যে কোনো একটি ব্যবহার করলেই হবে । তবে অলিভওয়েল তেল বেশি টাইম ত্বকে থাকে। তবে আপনার হাতের কাছে যা পাবেন আপনি সেটায় ব্যবহার করতে পারেন কোনো সমস্যা নাই ।

চেষ্টা করবেন পেট্রোলিয়াম ব্যবহার করার পরে মোজা পড়ে রাতে ঘুমাবেন । অনেকেই  যানেনা পায়ের যত্নে মোজা পরে ঘুমাতে হয় । ঘুম থেকে  উঠে মোজা খুলে কুসুম গরম পানি দিয়ে পা পরিস্কার করে নিবেন।এতে আপনার পায়ের ত্বক অনেক সফট হবে।পায়ের গোড়ালি ফাটার পতিকার হিসাবে পেট্রোলিয়াম জেলি ও অলিভওয়েল তেল খুব কার্যকারী।

স্টেপ নাম্বার ৫ঃমধু ।পায়ের গোড়ালি পাটার কারন ও প্রতিকার হিসাবে মধু খুব কার্যকারী । ৮ থেকে ১০ দিন পায়ে মধু ব্যবহার করতে পারলে ভালো ফলাফল পাবেন। প্রতিদিন গোসলের আগে মধু পায়ে মেখে ১০ মিনিট থাকবেন।

১০ মিনিট হয়ে গেলে পায়ের গোড়ালি ম্যাসেজ করে ধুয়ে ফেলে দিবেন।এতে পায়ের গোড়ালি ভালো থাকবে।আশা করি নিয়ম গুলো মানলে ভালো ফলাফল পাবেন। কমবেশি আমাদের সকলের বাসাতেই মধু থাকে , কেননা মধু আমরা শুধু রূপচর্চা করিনা আমরা খেয়েও থাকি । কিছু কিছু ক্ষেত্রে মধুকে ওষুধ ও বলা হয় । 

স্টেপ নাম্বার ৬ঃচালের গুঁড়া ।ত্বকের যত্নে চালের গুড়ার ভুমিকা অপরিসীম। পায়ের গোড়ালি ভালো রাখার জন্য চালের গুড়া অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ । চালের গুড়া আর অ্যাপেল সিডার ভিনেগার একসাথে মিশিয়ে পায়ের গোড়ালিতে মাখিয়ে রাখুন।

৫ মিনিট পরে হাতের তালুতে অল্প পানি নিয়ে ম্যাসেজ করুন ২ থেকে ৩ মিনিট ,এতে আপনার পায়ের ফাটা দাগ গুলো অনেকটাই কম মনে হবে। চালের গুড়া আমাদের শুধু পায়ের যত্নে কাজে লাগেনা মুখে হাতেও স্ক্রাব এর কাজ করে । সুন্দর থাকার জন্য আমাদের শুধু পায়ের না হাত , পা , মুখ এবং কি শরীরের প্রতিটি অঙ্গের যত্ন নেয়া প্রয়োজন ।

স্টেপ নাম্বার ৭ঃএ ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ হোলও বাজারে পিউমিক পাথর নামক একটি পাথর পাওয়া যায়। প্রতিদিন যদি গোসলের সময় এই পাথর দিয়ে পা ঘসতে পারেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন। পাথরে ঘসার ফলে পায়ের মরা চামরা টা উঠে যাবে । এবং আপনার পা কে নরম করে তুলবে ।

উপরের স্টেপ গুলো যদি আপনারা ফলো করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনারা উপকৃত হবেন । আশা রাখি আপনি স্টেপ গুলো মেন্টেন করে চলবেন । এই উপাদান গুলো কম বেশি আমাদের সকলেরই বাসায় থাকে আলাদা ভাবে টাকা খরচ করে কিনতে হয়না । তাই স্টেপ গুলা অ্যাপ্লাই করতে আপনাদের আলাদা ভাবে টাকা খরচ করতে হবেনা । আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।

পায়ের গোড়ালি ফাটার কারন 

  • খালি পায়ে চলাফেরা করা।
  • পরিমান মতো পানি না পান করা ।
  • দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকা।
  • শক্ত জুতা ব্যবহার করা।
  • ধুলাবালিতে কাজ করা।
  • অতিরিক্ত পা ঘামানো।
  • নিয়মিতো পায়ের যত্ন না নেয়া।
  • ময়লা পায়ে অধিক সময় থাকা।
  • ভিটামিন,মিনারেল ও জিঙ্কের অভাব হলে।
  • ভিটামিন 'এ','সি' ও 'ই' এর অভাব হলে।
  • শীত কালীন আবহাওয়া।
  • ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের অভাব।
 শুধু শীতকাল না অন্যান্য সময়েও পা ফেটে থাকে। পায়ের গোড়ালি ফাটা একটি রোগ ও বটে। বেশির ভাগ মানুষ এ সমস্যায় পড়েন। অতিরিক্ত ওজন,ডায়াবেটিকস রোগে ভুগছেন এমন মানুষদের বেশি পা ফাটার সমস্যা হতে পারে। পরিমান মতো পানি না খাওয়া, ভিটামিন যুক্ত খাবারের অভাব পা ফাটার অন্যতম কারন।

ময়লা পায়ে অধিক সময় থাকা, ময়েশ্চরাইজার মেখে ধুলা ময়লায় হেটে বেড়ানো । ঘুমানোর সময় পা পরিস্কার না ঘুমানো পা ফাটার আসল কারন হতে পারে আপনার জন্য।

পায়ের গোড়ালি ফাটার প্রতিকার

  • খালি পায়ে চলা ফেরা থেকে বিরত থাকা।
  • নরম জুতা পরিধান করা।
  • পরিমান মতো পানি পান করা।
  • ভিটামিনের ঘারতি পূরণ করতে হবে।
  • ধুলাবালিতে বেশি সময় কাজ করা যাবেনা।
  • ঘুমানোর আগে অবশ্যই পা পরিস্কার করে ঘুমাতে হবে।
  • ময়েশ্চরাইজার ক্রিম ব্যবহার করা।
এ ছাড়াও পায়ের গোড়ালি  ফাটার প্রতিকার হিসাবে কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। চলুন জেনে নি ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি।

পা পরিস্কার রাখা

পা ফাটা থেকে রক্ষা পেতে গোসলের সময় সাবানের পাশাপাশি খোসা ব্যবহার করুন। বিশেষ করে শীতের সিজিনে পায়ের বিশেষ যত্ন নিন,কেননা শীতকালে শরীরের ত্বক বেশি শুষ্ক থাকে। আরেকটা বিষয়ের উপর খেয়াল রাখবেন সেটা হলো খালি পায়ে কখনো হাঁটবেন না । বাসাতে ও সব সময় চটি স্যান্ডেল পরে থাকবেন।

রাতে ঘুমাতে যাবার আগে অবশ্যই পা পরিস্কার করে পায়ে গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাতে ভুলবেন না। এবং সকালে উঠে হাল্কা গরম পানি করে পা ধুয়ে নিবেন । পা ধুয়ার পরে অবশ্যই শুকনা নেকরা দিয়ে পা মুছে নিবেন । পা ভিজা থাকার কারনে আবার আপনার পায়ে পাকল নামে এক ডিজিজ হতে পাজিজ। তাই অবশ্যই পা ভিজানোর পরে পরে পা মুছে নিবেন । 

সঠিক মোজা ও জুতা ব্যবহার করা

শীতকালে আমাদের পা কে সুরক্ষিত রাখার জন্য ভালো মানের উলের মোজা পরিধান করতে হবে,যেন আমাদের পায়ে বাতাস না পায়।মোজার পাশাপাশি ভালো মানের নরম সোলের জুতা পরিধান করতে হবে।তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পা ঘেমে ভিজে না যায়। ভেজা জুতা মোজা থেকে সাবধানে থাকতে হবে।

কেননা এতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।তাই পা ফাটা রোধে আমাদের সাবধান থাকতে হবে।অনেকের দেখা যায় পায়ের গোড়ালি দিয়ে রক্ত বের হয় ,আবার অনেক দুর্গন্ধ ছড়ায় ।তাই দেরি না করে পায়ের যত্ন নিন । রক্ত পড়া বেশি হোলে প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে যান , কিন্তু অবহেলা করবনে নাহ । এই রোগ যে কোনো মানুষের হতে পারে । তাই ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সকলেরই নরম জুতা ও ভালো মোজা ব্যবহার করা উচিৎ ।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা

ময়েশ্চারাইজার ক্রিম পায়ের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। নিয়িমিত ব্যাবহারে আপানার পায়ের গোড়ালি সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তুলবে। তাই আপনাকে অবশ্যই ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ক্রিম কিনতে হবে।যেমন ভ্যাসলিন ,নিভিয়া সফট ইত্যাদি ।

সকালে এবং রাতে এ দুই টাইমে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। অবশ্যই পা পরিস্কার করার পরে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করবেন। ময়েশ্চারাইজার ক্রিম শুষ্ক ত্বককে নরম করতে সাহায্য করে । ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগিয়ে অবশ্যই খালি পায়ে হাটবেন নাহ বা ময়লাই যাবেন নাহ । ভালো থাকার জন্য কিছু নিয়ম তো আপনাকে মানতে হবে ।

শেষ কথা ঃপায়ের গোড়ালি ফাটার কারন ও প্রতিকার

সিজিন চেঞ্জ হবার সাথে সাথে আমাদের ত্বকেরও পরিবর্তন ঘটে। তাই আমাদের শরীরের বিশেষ করে পায়ের গোড়ালির যত্ন নিতে হবে। আর আমাদের ভিটামিন 'এ','সি' ও 'ই' এর ঘারতি পুরন করতে হবে।আমাদের পায়ের যত্ন নেয়া সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

মনে রাখবেন বাড়িতে যত্ন নিবার পরেও যদি পায়ের উপসর্গ গুলি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য পরিপূর্ণ সুস্থ থাকা প্রয়জন।তাই অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।পায়ের গোড়ালি ফাটার কারন ও প্রতিকার সম্পর্কে কারো কোনো মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url