চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার
চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চুলের যত্নে অদ্বিতীয় হলো কালোকেশী বা কেশরাজ । চুল আমাদের সবারই খুব প্রিয়। চুলের যত্নে আমরা অনেক কিছুই ব্যবহার করি যেমন বিভিন্ন ধরনের হেয়ার প্যাক, আমলা , মেহেদি পাতা, মেথি , এলোভেরা , কালোকেশী ইত্যাদি ।
বাইরের হেয়ার প্যাক এর চাইতে আমরা বেশি ভরসা করি প্রাকৃতিক ভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোতে। তারমধ্যে কালোকেশী অন্যতম। কালোকেশী অনেক গুণ ।আর কালোকেশী আমাদের বাড়ির আঙিনায় আশপাশে ঝোপঝাড়ে, পুকুরের আশেপাশে, বন জঙ্গলে হয়ে থাকে।
পেজ সূচিপত্র ঃ চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার
- চুলের যত্নে কালোকেশীর ব্যবহার
- কালোকেশী কি
- কালোকেশী পাতার গুনাগুন ও উপকারিতা
- কালোকেশী ব্যবহারে চুল কালো হয়
- চুল পড়া রোধ করে কালোকেশী
- কালোকেশী গাছের ঔষধি গুন
- কালোকেশী বা কেশরাজের ব্যবহার পদ্ধতি
- কালোকেশি তেল বানানোর পদ্ধতি
- কালোকেশী পাতার গোপন কিছু কার্যকারিতা
- উপসংহারঃ চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার
চুলের যত্নে কালোকেশীর ব্যবহার
চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। কালোকেশী কেশরাজ চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। চুল পড়ে যাওয়া রোধ করতে কালোকেশী পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চুলের গোড়া শক্ত করে , চুল পড়া কমায় , চুল ঘন কালো করতে সাহায্য করে। তার পাশাপাশি চুলের অকালপক্ক তাও দূর হয়।
নিয়মিত কালোকেশী ব্যবহার করলে চুল সাদা না । অকালপক্বতার হাত থেকে বাঁচতে এই কালোকেশী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয় আপনার মাথার খুশকি দূর করতে ভীষণ কার্যকরী । চুল ঘন কালো মজবুত করতে কালো কে সেই বেস্ট । কালো কেশিকে আয়ুর্বেদিক ঔষধ বলা হয় ।
শুধু তাই নয়, যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে ওর চুল ভেঙ্গে যায় বড় হয় না তারা
যদি নিয়মিত কালোকেশী ব্যবহার করে তাহলে নিজেই এর উপকার উপলব্ধি করবে।
কালোকেশী কি
কালোকেশী একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা মূলত ও একটি ঔষধ গাছ। এই গাছটি সাধারণত একা একাই বাড়ির আঙ্গিনায় ঝোপঝাড়ে, পুকুর পাড়ে ও বন জঙ্গলে হয়ে থাকে। এই গাছ মূলত চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। গ্রাম অঞ্চলের মানুষ ভেষজ ঔষধ হিসেবে ও ব্যবহার করে। কালোকেশীর পাতা দেখতে লম্বা লম্বা সবুজ রঙের হয় ও তার কান্ডের অগ্রভাগে ছোট ছোট সাদা সাদা ফুল দেখা যায় সবুজ রঙের ফল ও থাকে ।
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার ও ৭ টি উপকারিতা
কালোকেশী চুলের জন্য যেমন উপকারী তেমনি মানুষের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। এই গাছের পাতা মানুষের শরীরের ক্ষত সারাতে খুব কার্যকরী। এছাড়াও বিভিন্ন ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয় যেমন, কালোকেশী পাতার রস খেলে ব্লাড সুগার কমায় , প্রাইভেটিকস হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেই ।সর্বোপরি কালোকেশী অনেক গুণ ।
কালোকেশী পাতার গুনাগুন ও উপকারিতা
চুলের যত্নে কালকেশীর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সবাই জানি। তার মধ্যে
অন্যতম হলো কালকেশীর পাতা। কালকেশী চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন এই
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তেমনি এটি মহা ঔষধ হিসেবে পরিচিত ।
কালোকেশীতে আছে ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং আয়রন। এই তিন উপাদানের চুলের
স্বাস্থ্য ধরে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দিব
এই পাতায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্কেলপের অন্তরে ফ্রী রেডিকেলস এর বিরুদ্ধে
লড়াই করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
কালোকেশী পাতার রস নিয়মিত লাগালে আপনার খুশকি সমস্যা ও চলে যাবে। শীতকালে আমাদের
মাথায় খুশী সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাই আপনি চেষ্টা করবেন কালকেশী ব্যবহার
করতে। যাতে করে আপনার সমস্যা দূর হয়ে যায়।
কালোকেশী ব্যবহারে চুল কালো হয়
কালোকেশী দিয়ে চুলের রং কালো হয় ও চুল ঘন করতেও এই পাতা উপকারী এই পাতাকে কালকেশী বলা হয়। বাগানে বাড়ির আশপাশে এই গাছের বেড়ে ওঠা। কালোকেশের পাতা তুলে নিয়ে সামান্য ফুটিয়ে তার জল মাথায় লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর গোসল করে ধুয়ে ফেলে দ...। সপ্তাহে তিনদিন করতে পারেন। তবে শীতকালে সপ্তাহে একদিন করবেন। আর যাদের ঠান্ডার সমস্যা আছে তারা বুঝে শুনে ব্যবহার করবেন ।
চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার চুল যদি কালার করে ড্যামেজ হয়ে যায় বা কালার নষ্ট হয়ে যায় কালো কালার ফিরে না আসে তাহলে আপনি কালোকেশী ব্যবহার করুন। চমৎকারভাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে আপনার চুলের কালার চেঞ্জ হয়ে যাবে। আগের থেকেও চুল ঘন কালো ও রেশশমি হবে।চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
চুল পড়া রোধ করে কালোকেশী
চুল পড়া সমস্যা আমাদের প্রতিদিনের । তাতে শীত গ্রীষ্ম যে ঋতু হোক না কেন। এই পরিস্থিতিতে চুলের যত্নে কালকেশী অন্যতম। চুলের গোড়ায় কেশতীপাতা অনেক রকমের উপকারিতা দেয়। পাতলা চুল ঘন করতে এই পাতার গুনাগুন অপরিসীম। কেশতী পাতায় উপস্থিত ভিটামিন ও মিনারেল চুল পড়া কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।
আরো পড়ুনঃকাঁচা হলুদের ১৫টি কার্যকারী গুনাগুন ও উপকারিতা
এছাড়াও দুশ্চিন্তা সম্পর্কিত হেয়ার ফল কমানোর ক্ষেত্রেও এ পাতার তেলের গুরুত্ব অপরিসীম ।কেশোরা তেল মালিশে দুশ্চিন্তা দূর কমে এবং স্বাভাবিকভাবে হেয়ার ফলও চলে আসে নিয়ন্ত্রণে ।
কালোকেশী গাছের ঔষধি গুন
চুলের যত্নে কালোকেশীঃ যারা চুলের যত্ন নিতে চান বা ভালোবাসেন তারা অবশ্যই
কালোকেশী ব্যবহার করবেন চুলের গোড়া মজবুত করে , চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ,
নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
রক্ত পরিষ্কার করেঃ কেশরাজ বা কালোকেশী রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে । মাসে অন্তত দুই থেকে তিন বার এক কাপ পরিমাণ পাতার রস খেলে রক্তের ক্ষতিকারক উপাদান গুলো ধ্বংস হয়ে যায় ।
ব্লাড সুগারের মাত্রা কমায়ঃ গবেষণায় দেখা গেছে, কালকেশী পাতার রস ব্লাড
সুগারের মাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে ।
ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করেঃ নিয়মিত কালকেশীর পাতার রস খেলে আপনার শরীরে সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করবে। যারা অনেকদিন ধরে ডায়াবেটিকস আক্রান্ত হয়ে আছে তারা অবশ্যই নিয়মিত কালোকেশী পাতার রস খাবেন।
লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ কালোকেশী পাতার রস লিভারের স্বাস্থ্য
ভালো রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । আপনি যদি নিয়মিত কালকেশী পাতার
রস খান তাহলে লিভারের সমস্যায় আপনাকে ভুগতে হবে না । তাই লিভারের রোগ থেকে
বাঁচতে অবশ্যই কালোকেশী পাতার রস খাবেন ।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কালকে সে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়িয়ে দেয়। ফলে নিয়মিত কালকেশীর শাক রান্না করে খেলে পুষ্টির চাহিদাও পূরণ
হবে। কালো কেশী শাক হিসেবে রান্না করেও খায়।
রক্ত পড়া বন্ধ করে ঃ দেহের কোন স্থান কেটে গেলে বা আঘাত পেলে
সেখানে এই পাতা থেকে প্রলেপ করে লাগিয়ে দিন সেখান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে
এবং ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যাবে ।
মশার উপক্রম কমায়ঃ কালো কেসের পাতার রস মশা নিধনে ভালো কাজ করে। এর রস
পানির সাথে মিশিয়ে ঘরের চারপাশে দেয়ালে প্রলেপ করে দিলে ঘরে মশা ঢুকে না।
পেটের কৃমি ভালো হয়ঃ কালো কেশী পাতার রস নিয়মিত খেতে পারলে পেটের কৃমি দূর হয়ে যায় ।পেটের কৃমি দূর করতে কালোকেশী পাতা খুব কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।
কালোকেশী বা কেশরাজের ব্যবহার পদ্ধতি
কেশতী পাতার রস সরাসরি আপনি স্ক্যাল্পে লাগাতে পারেন। এছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন হেয়ার মাস্ক হিসাবে । সে ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন ২ টেবিল চামচ ভৃঙ্গরাজ পাউডার এবং আমলকি পাউডার। এটি একটি পাত্রে দুটি উপকরণ সম পরিমাণে নিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার করুন সাথে টক দই মেশালে আরো ভালো হয়। এভাবে তৈরি হয়ে গেল ঘরোয়া হেয়ার মাস্ক । একঘন্টা মাথায় রেখে গোসল করে ভালো মতো মাথা পরিষ্কার করে নিবেন।
এছাড়াও কালোকেশী , মেহেদী পাতা, মেথি, অ্যালোভেরা , জবা ফুল সব উপকরণ একসাথে পেস্ট করে চুলে লাগাতে পারেন । সপ্তাহে.১ দিন অবশ্যই ব্যবহার করবেন। তার চেয়ে বেশি ব্যবহার করবেন না, না হলে ক্ষতি হতে পারে। আর যদি কারো ঠান্ডা লাগা সমস্যা থাকে তাহলে বুঝে শুনে ব্যবহার করবেন।
কালোকেশি তেল বানানোর পদ্ধতি
এক মুঠো কারি পাতা, তিনটি জবা ফুল এবং ৮ থেকে ১০ টি ৬৩ পাতা প্রথমে ভালো করে
ধুয়ে শুকনো করে নিন । এবার সেই পাতা ও ফুল আলাদা করে সরিয়ে রাখুন। এরপর একটি
নারিকেল তেল দিন। এখন হালকা আঁচে এই তেল গরম করুন। পরে ঠান্ডা করে বোতলে
সংরক্ষণ করে রাখুন। এভাবে খুব সহজে কালকেশী পাতা দিয়ে তেল তৈরি করা
যায়।
আরো পড়ুনঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এই তেল তৈরির আরেকটি উপায় হল ভৃঙ্গরাজ পাউডার দিয়ে। প্রায় এক চা চামচ ভৃঙ্গরাজ পাউডার প্রায় তিন থেকে চার চার চামচ নারিকেল তেলে মেশান। এটি একটি মিশ্রণ দিন এবং এটি প্রস্তত । এটি আপনার মাথার ত্বকে লাগান, সারারাত রাখুন এবং চার থেকে ছয় মাস ব্যবহার করুন। এই তেল আপনার চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত ভৃঙ্গরাজ তেল ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মজবুত হবে। আপনি কি প্রতিদিন ভৃঙ্গরাজ তেল ব্যবহার করতে পারবেন? হ্যাঁ। ভৃঙ্গরাজ তেল হলো একটি প্রাকৃতিক এবং পুষ্টিকর তেল যা আপনার ত্বকে সুস্থ থাকার জন্য সর্বোত্তম যত্ন ও পুষ্টি দেয় ।
কালোকেশী পাতার গোপন কিছু কার্যকারিতা
কালকেশী পাতার গোপন কিছু কার্যকারিতা রয়েছে যা হয়তো অনেকের অজানা । অধিক পরিমাণে কেশরাজ ব্যবহার হওয়ার কারণে একে কালোকেশী বলা হয়। কালোকেশীতে ডিম খাইলিন গ্লূকোজ ৬ ফসফেট থাকে । অনেক রোগের চিকিৎসায় এই ভেষজ গাছটি ব্যবহার করে থাকে ।
আমাদের দেশে ঘরোয়া রুপটানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে এই কেশতীপাতা। এমনকি আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও চুলের যত্নে কেশতীপাতা বা ভৃঙ্গরাজের উল্লেখ রয়েছে । "কমপ্লিট বুক অফ আয়ুর্বেদিক হোম রেমিডিস'' বইতেও ভৃঙ্গরাজের ব্যবহারের প্রসঙ্গে বিভিন্ন তথ্য মেলে। তাই অকপটে আমরা ধরে নিতে পারি কেশতী পাতার নিঃসন্দেহে অনেক গুণ ।
উপসংহারঃ চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার
সৌন্দর্য পিপাসু ও মানুষের জন্য চুলের যত্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর চুলের
যত্নে মানুষ প্রাচীন কাল থেকে এই ভেষজটি ব্যবহার করে আসছে। শুধু তাই নয়
কালোকেশী গাছ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ হিসাবেও কাজ করে। আদি যুগের মানুষেরা
এইসব গাছ-গাছালি দিয়েই চিকিৎসা করতো। তাই চুলের যত্নে কালকেশী ব্যবহার খুব
গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে একটা কথা বলতে চাই চুলের যত্নে কালো কে সেই ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কালকেশী ব্যবহারে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে, চুল পড়া কমাবে , চুল ঘন ও
কালো মজবুত হবে। তাই অবশ্যই আমরা নিয়মিত কালকেশী ব্যবহার করব।
আজকের আর্টিকেল পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করুন। আমার আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করতে
ভুলবেন না। এতক্ষণ সময় নিয়ে সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url