গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

   পুষ্টিগুণের ভরপুর সবজি হলো গাজর। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল,পটাশিয়াম,আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অনেক ধরনের ফাইবার ও খনিজ উপাদান।গাজর হলো একটি শক্তিশালি খাদ্য উপাদান।

গাজর-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

অন্যান্য সবজির থেকে গাজরকে বেশি শক্তিশালী সবজি বলা হয়। গাজর খেলে আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নিয়মিত গাজর খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাই আজ আমরা জানবো গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ।

পেজ সূচিপত্রঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

গাজর খাওয়ার উপকারিতা

প্রতিদিন এক গ্লাস গাজরের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আশ্চর্যজনকভাবে বৃদ্ধি করে। শরীরের ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। গাজরের ভিটামিন ছাড়া বিভিন্ন ধরনের খনিজ , ফসফরাস ,পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে। যা হাড় গঠন নার্ভের সিস্টেমকে শক্ত ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

তাছাড়াও গাজরের আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। গাজর খেলে কি কি রোগ থেকে আমরা দূরে থাকতে পারি, সেই সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত জানব।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

গাজরে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। এতে থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ আপনার পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই খুব ঘন ঘন ক্ষুধা লাগে না। মূলত এজন্যই গাজর খেলে সহজে ওজন বাড়ার ভয় থাকে না। তার পাশাপাশি গাজর খুব শক্তিশালী একটি খাবার। 

গাজরে ক্যালসিয়ামও পাওয়া যায়, যা আপনার হাড় ও দাঁতের জন্য খুব উপকারী।

হজম শক্তির ক্ষমতা বাড়ায়

গাজরে থাকা ফাইবার অন্তের জন্য ভালো। নিয়মিত গাজর খেলে হজমের সমস্যা হয় না। গাজরে থাকা ফাইবার আপনার পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে । নিয়মিত গাজর খেলে আপনাকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে হবে না। থাকার জন্য অবশ্যই নিয়মিত গাজর খান।

গাজরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

গাজর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে খুব কার্যকরী। ৬১ গ্রাম একটি মাঝারি আকারের গাজর, এই মাঝারি আকারের গাজরে আছে ৫০৯ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন "এ"। যা আপনার ক্যান্সারে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। 

আরো পড়ুনঃপায়ের গোড়ালি ফাটার কারন ও প্রতিকার

এ ছাড়াও গাজরে আছে Falcarinol এবং Falcarindol যা আমাদের শরীরে এন্ট্রি ক্যান্সার উপাদান গুলিকে রিলিফ করে। তাই গাজর খেলে  ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার , ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে গাজর

এছাড়াও গাজর ভালো এন্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করে। এটি ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। কোথাও কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে সেখানে গাজোরে পেস্ট লাগিয়ে নিন তাহলে আপনার ইনফেকশনের ভয় থাকবে না ।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

গাজরে রয়েছে ভিটামিন এ, এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। শীতকালে আমাদের ত্বক ড্রাই ও শুষ্ক হয়ে যায়।গাজরে আরো রয়েছে প্রচুর পরিমান পটাশিয়াম যা আমাদের ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করে এবং  আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে।

 এছাড়াও সুন্দর ত্বকের জন্য গাজর খেতে পারেন। এটা আপনার ত্বকে ভেতর থেকে সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করবে। এর ভিটামিন এ ও এন্টি অক্সিডেন্ট আপনার ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করবে। সেই সাথে ভিটামিন এ ত্বকের অযোচিত ভাজ পড়া, কালো দাগ, ব্রন , ত্বকের রঙের অসামঞ্জসসতা ইত্যাদি দূর করে আপনাকে সুন্দর হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

গাজর-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

প্রতিদিন এক গ্লাস গাজরের জুস শরীরের ক্ষমতা আশ্চর্যজনকভাবে বৃদ্ধি করে । শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। গাজরের ভিটামিন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খনিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে। যা হাড় গঠন নার্ভের সিস্টেমকে শক্ত ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

গাজরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই নিয়মিত গাজর খেলে সহজে আমাদের রোগে আক্রান্ত করতে পারে না।

 গাজর ডায়াবেটিকসের ঝুঁকি কমায়

গাজর আঁশে পরিপূর্ণ। অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিকস আক্রান্তরা বেশি পরিমাণে ফাইবার খেলে  গ্লূকোজ মেটাবলিজম উন্নতি লাভ করে। তাই ডাইবেটিকসে আক্রান্তদের গাজর খাওয়া আবশ্যক ।

একটি মাঝারি সাইজের গাজরে রয়েছে ২৫ ক্যালরি। তাই গাজর খেলে আপনার ডায়াবেটিকস তো বাড়বে না বরং গাজর খেলে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে। গাজর স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি । যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে

গাজরে রয়েছে ফাইবার এবং পটাশিয়াম। আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ, ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন মতে, যেসব খাবারে অনেক সল্ট আছে সেসব খাবার আপনারা খাবেন না, এবং যেসব খাবারের পটাশিয়াম বেশি আছে সেসব খাবার খাবেন। গাজরের মধ্যে অনেক পটাশিয়াম আছে, এই পটাশিয়াম relax হয়নি (blood vessels)কে relax করে যখন ব্লাড ভেসেলকে রিলাক্স করে তখন ব্লাড খুব সহজে চলাচল করবে এবং আপনার প্রেসার কে কমিয়ে দিবে। তাই বলা হয় গাজর খেলে আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করবে।

লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজও দারুন উপকারী। শুধু লিভার নয় ফসফুস ও ভালো রাখে গাজরে থাকা পুষ্টি উপাদান সমূহ গাজরে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা শরীরে কলা জিনের উৎপাদন বাড়ায়। যার ফলে লিভারের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

রক্তে থাকা বাড়তি কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত গাজর খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যাবে, এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকলে আপনার হার্ট ও ভালো থাকে। গাজর শক্তিশালী একটি খাদ্য উপাদান। যা আমাদের রক্তে বাড়তি কোলেস্টেরল তৈরি করতে দেয় না। অবশ্যই আমাদের নিয়মিত গাজর খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা উচিৎ।

গাজর খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে

গাজরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । lutein এবং zeaxanthin.এই দুইটার মিশ্রণে এইজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনেরাসান (macular degeneration) বয়সের সাথে সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় একটি চক্ষু রোগ যা আপনার পড়া এবং ড্রাইভিং এর মত ক্রিয়াকলাপগুলির জন্য প্রয়োজনীয় তীক্ষ্ণ, কেন্দ্রীয় দৃষ্টি ঝাপসা করতে পারে।

আরো পড়ুনঃকাঁচা হলুদের ১৫টি কার্যকারী গুনাগুন ও উপকারিতা

 বয়স সম্পর্কিত এর অর্থ হলো এটি প্রায়সই বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ঘটে। এইটাকে প্রতিরোধ করার জন্য ভিটামিন এ অনেক ভাবে সাহায্য করে। আর এই ভিটামিন এ গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে । তাই বলা হয় গাজর আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য আমাদের নিয়মিত  গাজর খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

গাজর রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে

গাজরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। ভিটামিন এ আমাদের রাতকানা রোগ প্রতিরোধের সহায়তা করে। এটা এমন যা আমাদের রাতের অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করে দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে সাহায্য করে। তাই রাতকানা রোগ থেকে বাঁচতে অবশ্যই আমাদের গাজর খাওয়া উচিৎ ।

গাজর খাওয়ার অপকারিতা

গাজর পুষ্টিগুণে  সমৃদ্ধ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে গাজর খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে। অতিরিক্ত গাজর খেলে অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সেটা ভালো হবে না। তাই আজ আমরা জানবো গাজর খাওয়ার অপকারিতা গুলো।

.১। অতিরিক্ত গাজর খাওয়া উচিত নয়। কেননা অতিরিক্ত গাজর শরীরে ভিটামিন এ-র মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

২। যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের জন্য গাজর খাওয়া ক্ষতিকর। 

৩। যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা যদি নিয়মিত অতিরিক্ত গাজর খায় তবে তাদের পেটের সমস্যা হতে পারে।

৪। গাজরের চিনির পরিমাণ বেশি রয়েছে তাই যারা ডায়াবেটিসে রোগে ভুগছেন তাদের কম পরিমাণে গাজর খাওয়া উচিৎ ।

৫। পরিমাণে বেশি গাজর খেলে আপনার দেহে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন , ক্যালসিয়াম ইত্যাদি খনিজ গুলির শোষণে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই অবশ্যই আমাদের পরিমাণ মতো গাজর খাওয়া উচিৎ ।

গাজর-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

শেষ কথাঃগাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

গাজরে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম , ফসফরাস ও নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। সুস্থ থাকতে চাইলে বেশি বেশি গাজর খান। গাজর অনেক ভাবেই  খাওয়া যায় । যেমন গাজরের জুস, সালাদ , অন্য সবজির সাথে রান্না করে   কিংবা হালুয়া বানিয়ে খেতে পারেন ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজর রান্না করে খাওয়ার চাইতে কাঁচা গাজর অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। তাই নিয়মিত আমাদের কাঁচা গাজর খেতে হবে। গাজরে অনেক পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন রয়েছে.। যার কারণে আমাদের  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শুধু  তাই নয় ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য গাজর খুব উপকারী।

সবশেষে একটা কথা বলতে চাই, গাজরের অনেক পুষ্টিগুণ তাই আমরা সকলেই চেষ্টা করব নিয়মিত গাজর খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করার। সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই নিয়মিত গাজর খান।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url